দাদি : ও পরী,
ওওওওওওও পরী?
পরী : হুম বলো দাদি শুনছি তো!
দাদি : এ্যাঁই,
তুই নাকি প্রেম করিস?
পরী : হ্যাঁ করি তো, এটা তো এখন সবাই করে তাই আমিও করি!
দাদি : প্রেমিক পুরুষ কিছু চায় তোর কাছে?
পরী : হুম চায় তো, চাইবেনা কেন, আমার কাছে না চাইলে আর কার কাছে চাইবে?
দাদি : ওওওও বুচ্ছি,
আচ্ছা, ও পরী,
কি কি চায় রে তোর প্রেমিক পুরুষ?
পরী : ছেলেটা বড্ড নিরামিষ, একটু ভালোবাসা পেলেই তুষ্ট!
দাদি : তো সেটা কি, কিরাম ভালোবাসা রে?
পরী : এই তো ধরো,
সকালে কাজে যাওয়ার আগেই আমার পক্ষ থেকে একটা ফোন, কল অথবা একটা
শুভ সকাল জানিয়ে মেসেজ তাকে দিতেই হবে, এটা সে চায়!
কখনো অসুস্থ হলে দিনে কয়েকবার তার খবর নিই এটা ও চায়,
সে আরো চায়,রোজ তার খবর যেন আমি রাখি, অবশ্য একবারই তো বললাম বড্ড নিরামিষ, অল্পতেই তুষ্ট!
প্রেমিক সামলাতে আমার একদম হিমশিম খেতে হয়না মুটেও!
খুব স্বাভাবিক একটা মানুষ, মনটাও ভিষণ বড়ো!
আমার মায়ের চয়েস আছে সেটা বলতেই হয়!
দাদি : কি বললি, তোর মায়ের চয়েস মানে?
এ আবার কিরাম কথা রে বাবা!
আচ্ছা বাদ দে।
তোর প্রেমিক পুরুষের কথাই শুনবো আজ শুধু,
বাকি কথা পরে!
ওও আচ্ছা এতোটুকুই বুঝি ওর চাওয়া?
পরী : হুম এর বাহিরেও কিছু চাওয়ার থাকে নাকি আবার?
দাদি : কেন তুই কি আর কিচ্ছু জানিস না?
প্রেমিক পুরুষ তো আরো কতো কিছু চায়!
পরী : কই না তো?
দাদি : তাহলে তো এক সোনার হরিণ মার্কা প্রেমিক পেয়েছিস তুই!
আচ্ছা এর আগে আর কোন দিন প্রেম-ট্রেম করেছিস?
পরী : না গো দাদি না, এটাই শুরু.... হয়তো এটাই শেষ!
অবশ্য গায়ের রং একটু ফর্সা আর সবাই বলে চেহারায় ও নাকি অনেক মায়া, সেই কারণেই হয়তো ক্লাস থ্রি থেকেই এসব প্রপোজ-ট্রপ্রোজ পাওয়া শুরু হয়েছিল আমার জীবনে!
দাদি : তো তখন প্রেম করিস নি কেন?
পরী : না গো দাদি,
মা আমাকে বারণ করে বলেছে এসব ভালো না!
যত জনে যা বলবে সব এসে আমায় বলবি,
যদি কেউ কিছু হাতে দেয় নিবিনা, যদি খুব জোর করে তাহলে নিয়ে সোজা আমার হাতে এনে দিবি,
ঐ এক কথার উপরেই রয়ে গেলাম!
দাদি : ও পরী তুই বুঝি সব তোর মাকে বলতিস?
পরী : হুম তো আর কাকে বলবো?
আমার তো আর কোন বন্ধু নেই, সেই জন্ম থেকেই পেয়েছি মাকে বন্ধু হিসেবে,
জানো দাদি!
এ পর্যন্ত যত চিঠি পেয়েছি আমার জীবনে সব গুলো চিঠি হাতে পেয়েই এনে মায়ের হাতে দিতাম, আমি একটাও পড়তাম না, এবং এই প্রেমিকের চিঠি ছাড়া আর একটাও পড়িনি গো দাদি!
দাদি : কি বলিস এসব?
পরী : হ্যাঁ সত্যি তো, বিশ্বাস না হলে মা কে জিজ্ঞেস করে দেখো!
এই প্রেমিক পুরুষ টা যেদিন চিঠি দিলো,
সোজা এনে মা'কে দিলাম।
মা এই প্রথম আমার দেওয়া কোন চিঠি পড়ে একা একা হাসলো!
আমি খুব অবাক হলাম!
হাসার কারণ টা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি সেদিন!
এক সাপ্তাহ পর আমার ভার্সিটির এডমিশন টেষ্ট ছিলো বরাবরই স্বপ্নের ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেলাম!
তারপর আরো এক সাপ্তাহ কেটে গেলো ছেলেটা আবার আমার কাছে একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে একখানা চিঠি পাঠায়,
সেটাও এনে মায়ের হাতে দিই,
সেদিন ও দেখলাম মা হাসছে!
কারণ টা সেদিন ও জানার প্রয়োজন মনে করিনি!
তারপর একদিন মায়ের সাথে নিউমার্কেট হয়ে বাসে উঠবো ঠিক ঐ মুহূর্তে পেছন থেকে কেউ একজন নাম ধরে খুব ডাকছে আমায়,
পেছন ঘুরে দেখি সেই পুরুষ যে দু-দুবার চিঠি দিয়েছে,
মা'ও চিনতে পেরেছে তাকে,
মা আমাকে বলে চল ওর সাথে কথা বলবো,
বাসে আর উঠলাম না,
ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম,
মাকে সালাম করে ছেলেটা মায়ের দিকে একটা পত্র বাড়িয়ে দিলো,
ততদিনে আমারও বেশ মনে ধরেছে ছেলেটাকে,
কেমন যেনো অনুভব করছিলাম মনে মনে,
জীবনে এই প্রথম খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো পুরুষের হাত কেমন হয় সেটা একবার ছুঁয়ে দেখতে!
তবুও মা সামনে ছিলো তাই সাহস হয়নি,
অবশ্য মা সামনে না থাকলেও সাহস হতোনা,
প্রেমের বয়স দুই বছর পার হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনো ছেলেটার হাত তুলতুলে না খসখসে সেটাই জানিনা!
জানো দাদি,
খুব লাজুক ছেলে,
কেমন যেনো!
দাদি : আচ্ছা ও সব বাদ দে, তারপর কি হলো সেটা বল,
পরী : তারপর মা ছেলেটার সামনেই কাগজ টা খুলে পড়তে লাগলো মনে মনে, এরপর
আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
এই নে তোর প্রেমিক!
আজ থেকে তোরা প্রেমিক -প্রমিকা!
পরী তুই থাক, আমি বাসায় চললাম,
আমি তো অবাক হয়ে শুনছিলাম,
মা এসব কি বলছে,
ছেলেটা বললো, না না প্রয়োজন নেই ওকে বাসায় নিয়ে যান!
*কেন প্রেমিকার হাত ধরে শহর ঘুরার ইচ্ছে নেই বুঝি?
*নাহ্ তেমন ইচ্ছে এখন নেই, ভালোবাসা তো দূর থেকেও হয়!
আমি চললাম, দোয়া করবেন আন্টি!
*এই বলে হনহন করে চলে গেলো সামনে থেকে
তারপর থেকে মায়ের কথায় আমরা দু'জন প্রেমিক-প্রেমিকা!
দাদি : (দীর্ঘশ্বাস নিয়ে) ওহ্!
পরী : যেই প্রেমিক মা খুঁজে দেয় সেই প্রেমিক তো প্রেমিকই বটে!
দাদি : যাক রে পরী!
*পেয়েছিস সোনার হরিণ।
অমর্যাদা করিস নে কখনো,
এমন প্রেমিক পাওয়া খুব দায়,
হারাসনে যেন তুই অবহেলায়!
★নোট :
আমার ব্যাক্তিগত জীবনে এই ব্যাপার টির উপর গবেষণা করে দেখেছি যে মেয়ে গুলোর সাথে মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যতবেশি সেই মেয়ে গুলো নোংরা পথ থেকে দূরে থাকে ততবেশি,
প্রতিটি মায়ের উচিত কন্যা সন্তানের প্রতি অধিক বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা একদম ছোট বেলা থেকেই!
শাসনে নয় ভালোবাসায় বড় করতে হবে তাদের,
আপনার সন্তান যেন আপনার সাথে সব ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে সেই সুযোগ তাকে দিন, তাকে রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে দেবেন না! প্রয়োজনে একা ঘুমাতে দিবেন না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মায়েদের নজর দারির অভাবে কন্যা সন্তান গুলো বিপথগামী হচ্ছে!
সবশেষে একটা কথাই বলবো,
আপনার সন্তানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মানুষ টি আপনি হয়ে যান, তারপর থেকে দেখবেন আপনার মেয়েটা চরিত্র নিয়ে স্বামীর ঘর পর্যন্ত পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ...
[লেখক ও সম্পাদক :
ফেরারী রুবেল]