Wednesday, April 30, 2014

''কবিতা আমার অষ্টাদশী প্রেমিকা''





উৎসর্গ
......হেলাল হাফিজ

আমার
কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।
কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা,
সংগীতের লীলা?
কবিতা কি ছেলেখেলা,
অবহেলা রঙিন বেলুন?
কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান,
অভিজাত মহিলা -সেলুন?
কবিতা তো অবিকল মানুষের
মতো
চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক
শাসিত,
তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু
লাল নীল ক্ষত।
কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা,
গবেষণাগারে নিয়ে
খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু
জুড়ে
কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের
মৌলিক কাহিনী।
মানুষের মতো সেও সভ্যতার
চাষাবাদ করে,
সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের
শৈল্পিক মিলন,
তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু
যার উৎপাদন।
কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের
যে কোনো অ-সুখে,
নষ্ট সময়
এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,–
পথিক এ পথে নয়
‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।
আমার
কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

এক গ্লাস অন্ধকার হাতে
.......রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি।
শুন্যতার দিকে চোখ, শুন্যতা চোখের
ভেতরও–
এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি।
বিলুপ্ত বনস্পতির ছায়া, বিলুপ্ত হরিণ।
মৌসুমী পাখির ঝাঁক পালকের অন্তরালে
তুষারের গহন সৌরভ ব’য়ে আর
আনে না এখন।
দৃশ্যমান প্রযুক্তির জটাজুটে অবরুদ্ব কাল,
পূর্ণিমার চাঁদ
থেকে ঝ’রে পড়ে সোনালী অসুখ।
ডাক শুনে পেছনে তাকাই– কেউ নেই।
এক গ্লাস অন্ধকার
হাতে নিয়ে বসে আছি একা….
সমকালীন সুন্দরীগণ অতিদ্রুত উঠে যাচ্ছে
অভিজাত বেডরুমে,
মূল্যবান আসবাবপত্রের মতন নির্বিকার।
সভ্যতা তাকিয়ে আছে তার অন্তর্গত ক্ষয়
আর প্রশংসিত পচনের দিকে।
উজ্জ্বলতার দিকে চোখ, চেয়ে আছি–
ডীপ ফ্রিজে হিমায়িত কষ্টের পাশেই
প্রলোভন,
অতৃপ্ত শরীরগুলো খুঁজে নিচ্ছে চোরাপথ–
সেক্সড্রেন।
রুগ্নতার কাঁধে হাত
রেখে সান্ত্বনা বিলাচ্ছে অপচয়–
মায়াবী আলোর নিচে চমৎকার হৈ চৈ, নীল
রক্ত, নীল ছবি
জেগে ওঠে একখন্ড ধারালো ইস্পাত–
চকচকে,
খুলির ভেতরে তার নড়াচড়া টের পাই শুধু।
ইতিমধ্যে ককটেলে ছিন্নভিন্ন
পরিচয়,সম্পর্ক,পদবী–
উজ্জ্বলতার ভেতরে ফণা তুলে আর এক
ভিন্ন অন্ধকার।
গ্লাসভর্তি অন্ধকার উল্টে দিই এই
অন্ধকারে...

যদি আমি ঝরে যাইএকদিন
......জীবনানন্দ দাশ

যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল
কুয়াশায়;
যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-
ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে,
যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট
আছে গুজে,
যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়,
যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু
পায়,
শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন
সবুজে-
তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-
ছাওয়া মাঠে খুঁজে,
ঠেস্ দিয়ে বসে আর
থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে,
তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার
মৃত্যুর আহ্বান-
যার ডাক শুনে রাঙা রৌদ্রেরো চিল আর
শালিখের ভিড়
একদিন ছেড়ে যাবে আম জাম বনে নীল
বাংলার তীর,
যার ডাক শুনে আজ ক্ষেতে-
ক্ষেতে ঝরিতেছে খই আর মৌরির ধান;-
কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-
ভেজা শাদা হাতখান-
রাখো বুকে, হে কিশোরী,
গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান।...


যদি আমি ঝরে যাইএকদিন
......জীবনানন্দ দাশ

যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল
কুয়াশায়;
যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-
ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে,
যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট
আছে গুজে,
যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়,
যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু
পায়,
শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন
সবুজে-
তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-
ছাওয়া মাঠে খুঁজে,
ঠেস্ দিয়ে বসে আর
থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে,
তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার
মৃত্যুর আহ্বান-
যার ডাক শুনে রাঙা রৌদ্রেরো চিল আর
শালিখের ভিড়
একদিন ছেড়ে যাবে আম জাম বনে নীল
বাংলার তীর,
যার ডাক শুনে আজ ক্ষেতে-
ক্ষেতে ঝরিতেছে খই আর মৌরির ধান;-
কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-
ভেজা শাদা হাতখান-
রাখো বুকে, হে কিশোরী,
গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান।....


''ভালবাসি, ভালবাসি
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত..
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাস?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু
চাপ দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম শশব্যস্ত
হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,মাথার উপর
তপ্ত রোদ,বাহন
পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময় হঠাত দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার দিকে তাকিয়ে কাঁধে হাত
দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো শেভ করছ তুমি,গাল কেটে রক্ত পড়ছে,এমন
সময়
তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার
গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল
গলায় বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো খুব অসুস্থ তুমি,জ্বরে কপাল পুড়েযায়,
মুখে নেই রুচি, নেই কথা বলার
অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার
মুখের
দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?নাকি তোমার গরম
শ্বাস আমার
শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,প্রচন্ড
যুদ্ধে তুমিও অঃশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাস? ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও?
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস
দেবে,বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,হঠাত
বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাস? কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত
বুলাতে বুলাতে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই
পৃথিবীতে,বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাস?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-ভালবাস?
চুপ করে থাকবে?নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..

যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি..
দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,বুঝব
তুমি আছ,তুমি আছ
ভালবাসি, ভালবাসি....


''সেলাই দিদিমনি
জেমসের গান

এই দিদিমনি দিদিমনি, সেলাই
দিদিমনি
ছল ছল চোখে সেই দিদিমনি
দিদিমনি দিদিমনি সেলাই
দিদিমনি
এই শহরে তোমার পাশে আমিও
যে থাকি
ও লাল টুকটুক সেলাই দিদিমনি।
দিদিমনি নিও তুমি আমার
ভালবাসা
তোমার
চোখে দেখি আমি রংগীন
দিনের আশা
লাল টুকটুক লাল টুকটুক দিদিমনি।
উদয় অস্ত খাটো তুমি
ঝরাও দেহের ঘাম
মহাজন দেয় কি তোমার
ঘামের সঠিক দাম!
কখনো তুমি শিল্পী, আর
কখনো তুমি নারী
কখনো তুমি প্রেমিকা আর,
কখনো প্রতিবাদি
এই শহরে তোমার পাশে আমিও
যে থাকি।....



''যখন একা থাকার অভ্যাস হয়ে যায় ঠিক
তখনি স্রষ্টা কিছু মানুষের সন্ধান দেন
যখন তাদেরকে নিয়ে ভাল থাকার
অভ্যাস হয়ে যায় ঠিক তখনি আবার
একা হয়ে যেতে হয়।

_____হুমায়ূন আহমেদ....


 
 

No comments:

Post a Comment

thank you...