আমি মাঝেমাঝে রাতের
বেলায় জীবন দেখতে বের হই ।
মানুষের জীবন , অমানুষের জীবন ,
পাপের জীবন , পুন্যের জীবন ,
জীবনের কি আর শেষ আছে . . ?
রাত দুটো , একটা ট্রেন
ষ্টেশনে বসে আছি , ষ্টেশনের
নামটা না হয় নাই বললাম
তবে এটা একটা মফস্বল শহর ।
এতরাতে লোকজনের
আনাগোনা খুব কম , দুই তিন
ঘন্টা পরপর ট্রেন আসে যায় , দশ
মিনিটের জন্য ট্রেন
থামে এখানে । দিনের বেলায়
অবশ্য ভিন্ন চিত্র , মানুষ গিজগিজ
করে । একটু আগেই ট্রেন
চেড়ে গিয়েছে , তাই এখন
চারপাশ অনেকটা নিরব ।
কিছুটা দুরে ১২/১৩ বছরের
একটা ছেলে সিগারেটের বাক্স
কাঁদে নিয়ে দাড়িয়ে আছে . .
শোন , এদিকে আয় ।
সিগারেট দিমু ভাইজান ?
দিবি ? দে . . , কি নাম তোর ?
সিরাজ । সিরাজ মিঞা ।
ইস ! অল্পের জন্য তুই নবাব
হতে পারলিনা ! সিরাজ
মিঞা না রেখে নামটা সিরাজউদ্দৌলা রাখলেই
হত !
কি কন বুঝিনা ।
কিছুনা , একটু মজা করলাম আরকি । এত
রাত পর্যন্ত সিগারেট
বিক্রি করিস , তোর ঘুম আসেনা ?
ট্রেন আসার ফাঁকে ফাঁকে একটু
ঘুমিয়ে নিই । কি করুম ভাইজান ,
মহাজনের ধার দেয়া টাকায়
ব্যাবসা করি ঠিকমত সুদ
দিতে না পারলে খুব মাইর দেয় ।
মাইর বড় নাকি ঘুম বড় ? ?
তাচাড়া গরীবের আবার ঘুম
কিসের ? ঘুমতো হইলো বড়লোকের
লাইগা । ঐ যে দেখেন সামনের ১০
তালা বিল্ডিংটা ,
কি শান্তিতে ঘুমাইতেছে হেরা . .
( তাকিয়ে দেখলাম ভবনটার ঠিক
মাথার উপরেই যেন থালার মত
চাঁদটা বসে আছে , সিরাজ
সেদিকে তাকিয়ে আছে । আমার
কেন যেন মনে হচ্ছে সিরাজ
ভাবছে , ঐ চাঁদটাও
বুঝি বড়লোকদেরই দলে )
কিরে কি ভাবিস ?
কিছুনা ভাইজান ।
এখানে কোথায় থাকিস ?
এইতো ভাইজান ষ্টেশনের পিছনেই
একটা বস্তি আছে সেখানে ।
আর কে কে থাকে তোর সাথে ?
কেউনা , আমি একা ।
কেন ? তোর মা বাবা , ভাই বোন
এরা কই ?
সিরাজ কোন কথা বলেনা ,
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।
একি ! এই
ছেলেতো দেখি কাঁদছে ! গলায়
ঝুলিয়ে রাখা সিগারেটের
বাক্সটার উপর টপটপ করে অশ্রু পড়ছে ,
ল্যাম্পের আলোয় সেই অশ্রু
ঝিঁকমিঁক করছে । আমি ওর
গলা থেকে ভারি বাক্সটা নামিয়ে পাশে বসালাম ,
ওর কাঁন্নার কারন
জানতে চাইলাম . .
সিরাজ তার
মা বাবাকে কখনো দেখেনি , বৃদ্ধ
এক মহিলার কাছে সে এই
বস্তিতেই বড় হয়েছে ।
আস্তে আস্তে সে জানতে পারে তার
পিতৃ পরিচয় মাতৃ পরিচয় কিছুই নেই ,
ঐ
মহিলা তাকে ষ্টেশনে কুড়িয়ে পেয়েছিল
। কিছুদিন আগে সেই
মহিলাটা মারা যায় , সিরাজ
তাকে বাঁচাতে পারেনি ।
তোর মা বাবাকে দেখতে মন
চায় ?
না , কখনোই না !
যে মা আমারে তার বুকের দুধ
খাওয়ায় নাই সে কিসের মা ?
যে বাপ আমারে কোলে নেয় নাই
সে কিসের বাপ ?
তাহলে কাঁদিস কেন ?
আমি কাঁদি আমার মায়ের
লাইগা , যে মা আমারে ষ্টেশনের
ময়লা থেইকা তার
কোলে তুলে নিছে । যে মা আমার
মুখে দুধ দিতে পারেনাই কিন্তু
ভাতের ফেন(মাড়)
তো তুইলা দিছে ,
যে মা আমারে নিজে ভিক্ষা কইরা ভাত
খাওয়াইছে ।
কি হয়েছিল তার ? মারা গেল
কিভাবে ?
জানিনা , খালি সারাদিন
কাঁশতো আর মুখ দিয়া রক্ত পড়তো ।
ডাক্তার দেখাস নাই ?
চাইছিলাম , কিন্তু
বুড়ি রাজী হয়না । বুড়ি কয় , আমার
সময় শেষ তুই সারা দিন সিগারেট
বেইছা যা পাস
তা যদি ডাক্তাররে দিয়ে দেছ
তাইলে খাবি কি ? তোর
একটা ভবিষ্যত আছেনা । সেদিন
দুপুরে ভাত
খাইতে গিয়া দেখি বুড়ি মইরা শক্ত
হইয়্যা রইছে , গালের
রক্তগুলা মশা মাছিয়ে খাইতাছে . .
সিরাজ অঝোরে কাঁদছে ,
ওকে সান্তনা দেয়ার
ভাষা আমার নাই । আমি জানি ওর
এই কাঁন্না বেশীক্ষন
স্থায়ী হবেনা , পরবর্তী ট্রেন
আসলেই ও দৌড়াতে শুরু করবে ।
জানালায় জানালায়
গিয়ে ছোট্ট
মুখখানা তুলে চেঁচাতে থাকবে ,
ভাই সিগারেট লাগবো . . ? ভাই
সিগারেট লাগবো . . ?
আসলে রাতের বেলায় যখন সমস্ত
কোলাহল থেমে যায় , মানুষও কেন
জানি একা হয়ে যায় ।
দুঃখগুলো ধারালো চুরি হয়ে বারবার
খোঁচাতে থাকে বুকের ভিতর , আর
চাঁদনী রাত হলেতো কথাই নেই ।
এই মূহুর্তে আমার বুকের ভেতরও
চলছে চুরির খোঁচাখুঁচি , আর সহ্য
করা যাচ্ছেনা । মনখুলে কিছুক্ষন
কাঁদতে হবে , কিন্তু সিরাজের
সামনে কাঁদা যাবেনা । ছোটদের
সামনে বড়দের কাঁদতে নেই ,
তবে সিরাজের দুঃখগুলোর
সাথে আমার দুঃখগুলোর অদ্ভুত মিল
রয়েছে । থাক সেসব কথা . .
পিচঢালা পথে একা একা হাঁটছি ,
মাথার উপর ভয়ংকর সুন্দর এক চাঁদ ,
বুকের ভেতর ধারালো চুরির
খোঁচা বেড়েই চলেছে , আর
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রক্তক্ষরন ।
সেই রক্ত অশ্রু হয়ে দুচোখ
বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে পিচঢালা পথে ,
আর ল্যাম্পের আলোয় ঝিঁকমিঁক
করছে । ঠিক সিরাজের চোখের
জলের মত . . . .
(এটি একটি কাল্পনিক গল্প )
বেলায় জীবন দেখতে বের হই ।
মানুষের জীবন , অমানুষের জীবন ,
পাপের জীবন , পুন্যের জীবন ,
জীবনের কি আর শেষ আছে . . ?
রাত দুটো , একটা ট্রেন
ষ্টেশনে বসে আছি , ষ্টেশনের
নামটা না হয় নাই বললাম
তবে এটা একটা মফস্বল শহর ।
এতরাতে লোকজনের
আনাগোনা খুব কম , দুই তিন
ঘন্টা পরপর ট্রেন আসে যায় , দশ
মিনিটের জন্য ট্রেন
থামে এখানে । দিনের বেলায়
অবশ্য ভিন্ন চিত্র , মানুষ গিজগিজ
করে । একটু আগেই ট্রেন
চেড়ে গিয়েছে , তাই এখন
চারপাশ অনেকটা নিরব ।
কিছুটা দুরে ১২/১৩ বছরের
একটা ছেলে সিগারেটের বাক্স
কাঁদে নিয়ে দাড়িয়ে আছে . .
শোন , এদিকে আয় ।
সিগারেট দিমু ভাইজান ?
দিবি ? দে . . , কি নাম তোর ?
সিরাজ । সিরাজ মিঞা ।
ইস ! অল্পের জন্য তুই নবাব
হতে পারলিনা ! সিরাজ
মিঞা না রেখে নামটা সিরাজউদ্দৌলা রাখলেই
হত !
কি কন বুঝিনা ।
কিছুনা , একটু মজা করলাম আরকি । এত
রাত পর্যন্ত সিগারেট
বিক্রি করিস , তোর ঘুম আসেনা ?
ট্রেন আসার ফাঁকে ফাঁকে একটু
ঘুমিয়ে নিই । কি করুম ভাইজান ,
মহাজনের ধার দেয়া টাকায়
ব্যাবসা করি ঠিকমত সুদ
দিতে না পারলে খুব মাইর দেয় ।
মাইর বড় নাকি ঘুম বড় ? ?
তাচাড়া গরীবের আবার ঘুম
কিসের ? ঘুমতো হইলো বড়লোকের
লাইগা । ঐ যে দেখেন সামনের ১০
তালা বিল্ডিংটা ,
কি শান্তিতে ঘুমাইতেছে হেরা . .
( তাকিয়ে দেখলাম ভবনটার ঠিক
মাথার উপরেই যেন থালার মত
চাঁদটা বসে আছে , সিরাজ
সেদিকে তাকিয়ে আছে । আমার
কেন যেন মনে হচ্ছে সিরাজ
ভাবছে , ঐ চাঁদটাও
বুঝি বড়লোকদেরই দলে )
কিরে কি ভাবিস ?
কিছুনা ভাইজান ।
এখানে কোথায় থাকিস ?
এইতো ভাইজান ষ্টেশনের পিছনেই
একটা বস্তি আছে সেখানে ।
আর কে কে থাকে তোর সাথে ?
কেউনা , আমি একা ।
কেন ? তোর মা বাবা , ভাই বোন
এরা কই ?
সিরাজ কোন কথা বলেনা ,
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।
একি ! এই
ছেলেতো দেখি কাঁদছে ! গলায়
ঝুলিয়ে রাখা সিগারেটের
বাক্সটার উপর টপটপ করে অশ্রু পড়ছে ,
ল্যাম্পের আলোয় সেই অশ্রু
ঝিঁকমিঁক করছে । আমি ওর
গলা থেকে ভারি বাক্সটা নামিয়ে পাশে বসালাম ,
ওর কাঁন্নার কারন
জানতে চাইলাম . .
সিরাজ তার
মা বাবাকে কখনো দেখেনি , বৃদ্ধ
এক মহিলার কাছে সে এই
বস্তিতেই বড় হয়েছে ।
আস্তে আস্তে সে জানতে পারে তার
পিতৃ পরিচয় মাতৃ পরিচয় কিছুই নেই ,
ঐ
মহিলা তাকে ষ্টেশনে কুড়িয়ে পেয়েছিল
। কিছুদিন আগে সেই
মহিলাটা মারা যায় , সিরাজ
তাকে বাঁচাতে পারেনি ।
তোর মা বাবাকে দেখতে মন
চায় ?
না , কখনোই না !
যে মা আমারে তার বুকের দুধ
খাওয়ায় নাই সে কিসের মা ?
যে বাপ আমারে কোলে নেয় নাই
সে কিসের বাপ ?
তাহলে কাঁদিস কেন ?
আমি কাঁদি আমার মায়ের
লাইগা , যে মা আমারে ষ্টেশনের
ময়লা থেইকা তার
কোলে তুলে নিছে । যে মা আমার
মুখে দুধ দিতে পারেনাই কিন্তু
ভাতের ফেন(মাড়)
তো তুইলা দিছে ,
যে মা আমারে নিজে ভিক্ষা কইরা ভাত
খাওয়াইছে ।
কি হয়েছিল তার ? মারা গেল
কিভাবে ?
জানিনা , খালি সারাদিন
কাঁশতো আর মুখ দিয়া রক্ত পড়তো ।
ডাক্তার দেখাস নাই ?
চাইছিলাম , কিন্তু
বুড়ি রাজী হয়না । বুড়ি কয় , আমার
সময় শেষ তুই সারা দিন সিগারেট
বেইছা যা পাস
তা যদি ডাক্তাররে দিয়ে দেছ
তাইলে খাবি কি ? তোর
একটা ভবিষ্যত আছেনা । সেদিন
দুপুরে ভাত
খাইতে গিয়া দেখি বুড়ি মইরা শক্ত
হইয়্যা রইছে , গালের
রক্তগুলা মশা মাছিয়ে খাইতাছে . .
সিরাজ অঝোরে কাঁদছে ,
ওকে সান্তনা দেয়ার
ভাষা আমার নাই । আমি জানি ওর
এই কাঁন্না বেশীক্ষন
স্থায়ী হবেনা , পরবর্তী ট্রেন
আসলেই ও দৌড়াতে শুরু করবে ।
জানালায় জানালায়
গিয়ে ছোট্ট
মুখখানা তুলে চেঁচাতে থাকবে ,
ভাই সিগারেট লাগবো . . ? ভাই
সিগারেট লাগবো . . ?
আসলে রাতের বেলায় যখন সমস্ত
কোলাহল থেমে যায় , মানুষও কেন
জানি একা হয়ে যায় ।
দুঃখগুলো ধারালো চুরি হয়ে বারবার
খোঁচাতে থাকে বুকের ভিতর , আর
চাঁদনী রাত হলেতো কথাই নেই ।
এই মূহুর্তে আমার বুকের ভেতরও
চলছে চুরির খোঁচাখুঁচি , আর সহ্য
করা যাচ্ছেনা । মনখুলে কিছুক্ষন
কাঁদতে হবে , কিন্তু সিরাজের
সামনে কাঁদা যাবেনা । ছোটদের
সামনে বড়দের কাঁদতে নেই ,
তবে সিরাজের দুঃখগুলোর
সাথে আমার দুঃখগুলোর অদ্ভুত মিল
রয়েছে । থাক সেসব কথা . .
পিচঢালা পথে একা একা হাঁটছি ,
মাথার উপর ভয়ংকর সুন্দর এক চাঁদ ,
বুকের ভেতর ধারালো চুরির
খোঁচা বেড়েই চলেছে , আর
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রক্তক্ষরন ।
সেই রক্ত অশ্রু হয়ে দুচোখ
বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে পিচঢালা পথে ,
আর ল্যাম্পের আলোয় ঝিঁকমিঁক
করছে । ঠিক সিরাজের চোখের
জলের মত . . . .
(এটি একটি কাল্পনিক গল্প )
No comments:
Post a Comment
thank you...