
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর - আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।
কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।
কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
আল্লার নাম জপতে চাই ।।
______কাজী নজরুল ইসলাম
পদ্মার ঢেউ রে
মোর শুণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে।।
এই পদ্মে ছিলো রে যার রাঙা পা
এই পদ্মে ছিলো রে যার রাঙা পা
আমি হারায়েছি তারে
আমি হারায়েছি তারে।।
মোর পরাণও বধু নাই
পদ্মে তাই মধু নাই, নাইরে
পরাণও বধু নাই
পদ্মে তাই মধু নাই, নাইরে
বাতাস কাঁদে বাইরে
সে সুগন্ধ নাইরে
মোর রূপেরও সরষিতে, আনন্দ মৌমাছি।
নাহি ঝংকারে রে।।
______কাজী নজরুল ইসলাম
হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়ায়ে ঝরা ফুল একেলা আমি
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি ।
চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল
শুকানো পাতা মলীণ ফুলদ্বয়
বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল
ছিটাও অবিরল দিবসযামী ।
এলে অবেলায় পথিক বেভুল
বিদিছে কাটা নাহি পাবে ফুল
কি দিয়ে বরণ করি ও চরণ
নিভিছে জীবন জীবনস্বামী ।
______কাজী নজরুল ইসলাম
চিরদিন কাহারো
সমান নাহি যায়।
আজিকে যে রাজাধিরাজ
কাল সে ভিক্ষা চায়।।
অবতার শ্রীরাম
যে জানকীর পতি
তারো হ'ল বনবাসা
রাবণ-কর দুর্গতি।
আগুনেও পুড়িল না
ললাটের লেখা হায়।।
স্বামী পঞ্চ পান্ডব,
সখা কৃষ্ণ ভগবান,
দুঃশাসন করে তবু
দ্রৌপদীর অপমান।
পুত্র তার হ'ল হত
যদুপতি যার সহায়।।
মহারাজ শ্রীহরিশ্চন্দ্র
রাজ্যদান করে শেষ
শ্মশান- রক্ষী হয়ে
লভিল চন্ডাল বেশ।
বিষ্ণু- বুকে চরণ- চিহ্ন,
ললাট- লেখা কে খন্ডায়।।
______কাজী নজরুল ইসলাম
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মস্জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লার-পুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’
কোথা চেঙ্গিস্, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
______কাজী নজরুল ইসলাম
তোমরা ভয় দেখিয়ে কর্ছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়;
সেই ভয়ের টুটিই ধর্ব টিপে, কর্ব তারে লয়।
মোরা আপনি ম'রে মরার দেশে আন্ব বরাভয়,
মোরা ফাঁসি প'রে আন্ব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল।।
.....কাজী নজরুল ইসলাম
অনেক কথা বলার মাঝে
লুকিয়ে আছে একটি কথা।
বলতে নারি সেই কথাটি
তাই এ মুখর ব্যাকুলতা।।
সেই কথাটি ঢাকার ছলে
অনেক কথা যাই গো ব’লে
ভাসি আমি নয়ন-জলে
বল্তে গিয়ে সেই বারতা।।
অবকাশ দেবে কবে
কবে সাহস পাব প্রাণে
লজ্জা ভুলে সেই কথাটি
বল্ব তোমায় কানে কানে।
মনের বনে অনুরাগে
কত কথার মুকুল জাগে
সেই মুকুলে বুকে জাগাও
ফুটে উঠার ব্যাকুলতা।।
....কাজী নজরুল ইসলাম
'লিচু চোর'
....কাজী নজরুল ইসলাম
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা
ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা
দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!
‘বাবা গো মা গো’ বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!
যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা…!
এক আল্লাহ জিন্দাবাদ
- কাজী নজরুল ইসলাম
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।
ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে,
ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে।
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী,
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।
মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টাভুল-ভাষী।
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি।
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।
উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার,
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার!
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।
হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়,
কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়।
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি;
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি।
তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে,
নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে।
সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়,
আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়।
যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই,
উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই।
ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই,
দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই।
মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের,
শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে-- শখ ওদের!
আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ,
নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ।
পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো,
এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো।
সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে,
তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে।
দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল
তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল।
ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়,
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!
তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা,
এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা।
ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ,
পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ।
বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে,
হবে দুলদুল - আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে।
আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন,
তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন।
নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান
সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান!
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে - ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - "এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"।
হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়ায়ে ঝরা ফুল একেলা আমি
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি ।
চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল
শুকানো পাতা মলীণ ফুলদ্বয়
বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল
ছিটাও অবিরল দিবসযামী ।
এলে অবেলায় পথিক বেভুল
বিদিছে কাটা নাহি পাবে ফুল
কি দিয়ে বরণ করি ও চরণ
নিভিছে জীবন জীবনস্বামী ।
....কাজী নজরুল ইসলাম
তব গানের ভাষায়
সুরে বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি
এত
দিনে পেয়েছি তারে আমি যারে খুঁজেছি।।
ছিল পাষাণ হয়ে গভীর অভিমান
সহসা, এলো সহসা আনন্দ-অশ্রুর বান।
বিরহ-সুন্দর হয়ে সেই এলো
দেবতা বলে যাঁরে পুজেছি
বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি।।
তোমার দেওয়া বিদায়ের মালা পুন প্রাণ
পেল প্রিয়
হ’য়ে শুভদৃষ্টি মিলন-
মালিকা বুকে ফিরে এলো – এলো প্রিয়।
যাহারে নিষ্ঠুর বলেছি
নিশীথে গোপনে কেঁদেছি
নয়নের বারি হাসি দিয়ে মুছেছি
বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি।।
....কাজী নজরুল ইসলাম
শাওন–রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে।।
ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ–স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ ‘পরে।।
ঝুরিবে পূবালি বায় গহন দূর–বনে,
রহিবে চাহি’ তুমি একেলা বাতায়নে।
বিরহী কুহু–কেকা গাহিবে নীপ–শাখে
যমুনা–নদীপারে শুনিবে কে যেন ডাকে।
বিজলী দীপ–শিখা খুঁজিবে তোমায় প্রিয়া
দু’ হাতে ঢেকো আঁখি যদি গো জলে ভরে।।
....কাজী নজরুল ইসলাম
অভিশাপ
- কাজী নজরুল ইসলাম
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি'
যেদিন আমায় খুঁজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, -
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব'লবে সবাই - "সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?"
আসবে ভেঙে কান্না!
প'ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'!
বুকের মালা ক'রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন
হাজার
বছর বাঁচতে চায় আর যখন ব্যার্থ হয়,
তখন মুহূর্তেই মৃত্যু কামনা করে।
--- কাজী নজরুল ইসলাম...
"খাঁদু- দাদু"
_____কাজী নজরুল ইসলাম
ও মা! তোমার বাবার
নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক ড্যাঙ্গা-
ড্যাং- ড্যাং!
ওঁর নাকতাকে কে করল খ্যাঁদ্যা রাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে- ছা ব'সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে।
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং।
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছ্যাঁদা দিয়ে টুকি কে দেয়
'টু'!
ছোড়দি বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক! থুঃ!
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দাদু বুঝি চিনাম্যান মা, নাম বুঝি চাং চু,
তাই বুঝি ওঁর মুখটা অমন চ্যাপটা সুধাংশু।
জাপান দেশের নোটীশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়- নাক
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপটা নাকেই
বাজতো সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চলতে বেঁজির ছা
দাড়ির জালে প'ড়ে দাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি- বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙাতে 'আলমানাক'
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙ্গে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক করেছেন 'ট্যান'!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক
ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন -হাসিকে!
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
গানের আড়াল
...কাজী নজরুল ইসলাম
বন্ধু গো যেয়ো ভুলে '--
প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো না সে ফুল তুলে '!
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ - প্রভাতেই তুমি জাগি '
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ -সুষমা লাগি '।
যে কাটা লতায় ফুটেছে সে -ফুল রক্তে ফাটিয়া পড়ি,
সারা জনমের ক্রন্দন যার ফুটিয়াছি শাখা ভরি '-
দেখ নাই তারে! মিলন মালার ফুল চাহিয়াছ তুমি,
তুমি খেলিয়াছ বাজাইয়া মোর বেদনার ঝুমঝুমি!
ভালো মোর গান, কি হবে লইয়া এইটুকু পরিচয়,
আমি শুধু তব কন্ঠের হার, হৃদয়ের কেহ নয়!
জানায়ো আমারে, যদি আসে দিন, এইটুকু শুধু যাচি --
কন্ঠ পেরিয়ে হয়েছি তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি!
সাহেব ও মোসাহেব
– কাজী নজরুল ইসলাম
সাহেব কহেন, “চমৎকার! সে চমৎকার!”
মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে!
হুজুরের মতে অমত কার?”
সাহেব কহেন, “কী চমৎকার,
বলতেই দাও, আহা হা!”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের কথা শুনেই বুঝেছি,
বাহাহা বাহাহা বাহাহা!”
সাহেব কহেন, “কথাটা কি জান? সেদিন -”
মোসাহেব বলে, “জানি না আবার?
ঐ যে, কি বলে, যেদিন -”
সাহেব কহেন, “সেদিন বিকেলে
বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প।”
মোসাহেব বলে, “আহা হা, শুনেছ?
কিবা অপরুপ গল্প!”
সাহেব কহেন, “আরে ম’লো! আগে
বলতেই দাও গোড়াটা!”
মোসাহেব বলে, “আহা-হা গোড়াটা! হুজুরের গোড়া!
এই, চুপ, চুপ ছোঁড়াটা!”
সাহেব কহেন, “কি বলছিলাম,
গোলমালে গেল গুলায়ে!”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের মাথা! গুলাতেই হবে।
দিব কি হস্ত বুলায়ে?”
সাহেব কহেন, “শোনো না! সেদিন
সূর্য্য উঠেছে সকালে!”
মোসাহেব বলে, “সকালে সূর্য্য? আমরা কিন্তু
দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে!”
সাহেব কহেন, “ভাবিলাম, যাই,
আসি খানিকটা বেড়ায়ে,”
মোসাহেব বলে, “অমন সকাল! যাবে কোথা বাবা,
হুজুরের চোখ এড়ায়ে!”
সাহেব কহেন, “হ’ল না বেড়ানো,
ঘরেই রহিনু বসিয়া!”
মোসাহেব বলে, “আগেই বলেছি! হুজুর কি চাষা,
বেড়াবেন হাল চষিয়া?”
সাহেব কহেন, “বসিয়া বসিয়া
পড়েছি কখন ঝিমায়ে!”
মোসাহেব বলে, “এই চুপ সব! হুজুর ঝিমান!
পাখা কর, ডাক নিমাইএ”
সাহেব কহেন, “ঝিমাইনি, কই
এই ত জেগেই রয়েছি!”
মোসাহেব বলে, “হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা
আগেই সবারে কয়েছি!”
সাহেব কহেন, “জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত
হনুমান আর অপদেব!”
“হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা?”
প্রণামিয়া কয় মোসাহেব।।
কাজী নজরুল ইসলাম
এই রাঙামাটির পথে লো
মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি
ও বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো
মন লাগে না কাজে লো
রইতে নারি ঘরে আমার
প্রাণ হলো উদাসী লো
মাদলীয়ার তালে তালে
অঙ্গ ওঠে দুলে লো
দোল লাগে শাল পিয়াল বনে
নতুন খোপার ফুলে লো
মহুয়া বনে লুটিয়ে পরে
মাতাল চাঁদের হাসি লো
চোখে ভালো লাগে যাকে
তারে দেখবো পথের বাঁকে
তার চাচড় কেশে পড়িয়ে দেবো
ঝুমকো জবার ফুল লো
তার গলার মালার কুসুম কেড়ে
পড়বো কানের দুল
তার নাচের তালের ইশারাতে
বলবো ভালোবাসি লো
No comments:
Post a Comment
thank you...