কুসুমের গিয়েছে সৌরভ,
জীবনের গিয়েছে গৌরব।
এখন যা-কিছু সব ফাঁকি,
ঝরিতে মরিতে শুধু বাকি......
এ হতভাগারে ভালো কে বাসিতে চায়?
সুখ-আশা থাকে যদি বেসো না আমায়!
এ জীবন, অভাগার -- নয়ন সলিলধার
বলো সখি কে সহিতে পারিবে তা হায়!
এ ভগ্নপ্রাণের অতি বিষাদের গান
বলো সখি কে শুনিতে পারে সারা প্রাণ
গেছি ভুলে ভালোবাসা -- ছাড়িয়াছি সুখ-আশা
ভালোবেসে কাজ নাই স্বজনি আমায়!.......
ভেবেছি কাহারো সাথে মিশিব না আর
কারো কাছে বর্ষিব না অশ্রুবারিধার।
মানুষ পরের দুখে, করে শুধু উপহাস
জেনেছি, দেখেছি তাহা শত শত বার
যাহাদের মুখ আহা একটু মলিন হলে
যন্ত্রণায় ফেটে যায় হৃদয় আমার
তারাই -- তারাই যদি এত গো নিষ্ঠুর হল
তবে আমি হতভাগ্য কী করিব আর!
সত্য তুমি হও সাক্ষী, ধর্ম তুমি জেনো ইহা
ঈশ্বর! তুমিই শুন প্রতিজ্ঞা আমার।
যার তরে কেঁদে মরি, সেই যদি উপহাসে
তবে মানুষের সাথে মিশিব না আর........
জানি সখা অভাগীরে ভালো তুমি বাস না
ছেড়েছি ছেড়েছি নাথ তব প্রেম-কামনা --
এক ভিক্ষা মাগি হায় -- নিরাশ কোরো না তায়
শেষ ভিক্ষা শেষ আশা -- অন্তিম বাসনা --
এ জন্মের তরে সখা -- আর তো হবে না দেখা
তুমি সুখে থেকো নাথ কী কহিব আর
একবার বোসো হেথা ভালো করে কও কথা
যে নামে ডাকিতে সখা ডাকো একবার --
ওকি সখা কেঁদোনাকো -- দুখিনীর কথা রাখো
আমি গেলে বলো নাথ -- কী ক্ষতি তাহার?
যাই সখা যাই তবে -- ছাড়ি তোমাদের সবে --
সময় আসিছে কাছে বিদায় বিদায়......
একি রহস্য, একি আনন্দরাশি!
জেনেছি তাহারে, পাই নি তবুও পেয়ে।
তবু সে সহজে প্রাণে উঠে নিশ্বাসি,
তবু সে সরল যেন রে সরল হাসি,
পুরানো সে যেন এই ধরণীর চেয়ে।
O, what is this?
Mysterious and uncapturable bliss
That I have known, yet seems to be
Simple as breath and easy as a smile,
And older than the earth।........
সে আসি কহিল, "প্রিয়ে, মুখ তুলি চাও।'
দূষিয়া তাহারে রুষিয়া কহিনু, "যাও!'
সখী ওলো সখী, সত্য করিয়া বলি,
তবু সে গেল না চলি।
দাঁড়ালো সমুখে; কহিনু তাহারে, "সরো!'
ধরিল দু হাত; কহিনু, "আহা কী কর!'
সখী ওলো সখী, মিছে না কহিব তোরে,
তবু ছাড়িল না মোরে।
শ্রুতিমূলে মুখ আনিল সে মিছিমিছি;
নয়ন বাঁকায়ে কহিনু তাহারে, "ছি ছি!'
সখী ওলো সখী, কহিনু শপথ ক'রে
তবু সে গেল না সরে।
অধরে কপোল পরশ করিল তবু;
কাঁপিয়া কহিনু, "এমন দেখি নি কভু!'
সখী ওলো সখী, একি তার বিবেচনা,
তবু মুখ ফিরালো না।
আপন মালাটি আমারে পরায়ে দিল--
কহিনু তাহারে, "মালায় কী কাজ ছিল!'
সখী ওলো সখী, নাহি তার লাজ ভয়,
মিছে তারে অনুনয়।
আমার মালাটি চলিল গলায় লয়ে,
চাহি তার পানে রহিনু অবাক হয়ে।
সখী ওলো সখী, ভাসিতেছি আঁখিনীরে--
কেন সে এল না ফিরে.......
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে
হঠাৎ অকারণে
একটা কী সুর গুনগুনিয়ে
কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন
আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত, আমার
দোলনা ঠেলে ঠেলে;
মা গিয়েছে, যেতে যেতে
গানটি গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে
ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে
ফুলের গন্ধ আসে,
তখন কেন মায়ের কথা
আমার মনে ভাসে?
কবে বুঝি আনত মা সেই
ফুলের সাজি বয়ে,
পুজোর গন্ধ আসে যে তাই
মায়ের গন্ধ হয়ে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে
শোবার ঘরের কোণে;
জানলা থেকে তাকাই দূরে
নীল আকাশের দিকে
মনে হয়, মা আমার পানে
চাইছে অনিমিখে।
কোলের 'পরে ধরে কবে
দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে
সারা আকাশ ছেয়ে........
সন্ন্যাসী উপগুপ্ত
মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে
একদা ছিলেন সুপ্ত--
নগরীর দীপ নিবেছে পবনে,
দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে,
নিশীথের তারা শ্রাবণগগনে
ঘন মেঘে অবলুপ্ত।
কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ
সহসা বাজিল বক্ষে!
সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল,
স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল,
রূঢ় দীপের আলোক লাগিল
ক্ষমাসুন্দর চক্ষে।
নগরীর নটী চলে অভিসারে
যৌবনমদে মত্তা।
অঙ্গ আঁচল সুনীল বরন,
রুনুঝুনু রবে বাজে আভরণ--
সন্ন্যাসী-গায়ে পড়িতে চরণ
থামিল বাসবদত্তা।
প্রদীপ ধরিয়া হেরিল তাঁহার
নবীন গৌরকান্তি--
সৌম্য সহাস তরুণ বয়ান,
করুণাকিরণে বিকচ নয়ান,
শুভ্র ললাটে ইন্দুসমান
ভাতিছে স্নিগ্ধ শান্তি।
কহিল রমণী ললিত কণ্ঠে,
নয়নে জড়িত লজ্জা,
ক্ষমা করো মোরে কুমার কিশোর,
দয়া করো যদি গৃহে চলো মোর,
এ ধরণীতল কঠিন কঠোর
এ নহে তোমার শয্যা।'
সন্ন্যাসী কহে করুণ বচনে,
"অয়ি লাবণ্যপুঞ্জ,
এখনো আমার সময় হয় নি,
যেথায় চলেছ যাও তুমি ধনী,
সময় যেদিন আসিবে আপনি
যাইব তোমার কুঞ্জ,'
সহসা ঝঞ্ঝা তড়িৎশিখায়
মেলিল বিপুল আস্য।
রমণী কাঁপিয়া উঠিল তরাসে,
প্রলয়শঙ্খ বাজিল বাতাসে,
আকাশে বজ্র ঘোর পরিহাসে
হাসিল অট্টহাস্য।
...
বর্ষ তখনো হয় নাই শেষ,
এসেছে চৈত্রসন্ধ্যা।
বাতাস হয়েছে উতলা আকুল,
পথতরুশাখে ধরেছে মুকুল,
রাজার কাননে ফুটেছে বকুল
পারুল রজনীগন্ধা।
অতি দূর হতে আসিছে পবনে
বাঁশির মদির মন্দ্র।
জনহীন পুরী, পুরবাসী সবে
গেছে মধুবনে ফুল-উৎসবে--
শূন্য নগরী নিরখি নীরবে
হাসিছে পূর্ণচন্দ্র।
নির্জন পথে জ্যোৎস্না-আলোতে
সন্ন্যাসী একা যাত্রী।
মাথার উপরে তরুবীথিকার
কোকিল কুহরি উঠে বারবার,
এতদিন পরে এসেছে কি তাঁর
আজি অভিসাররাত্রি?
নগর ছাড়ায়ে গেলেন দণ্ডী
বাহিরপ্রাচীরপ্রান্তে।
দাঁড়ালেন আসি পরিখার পারে--
আম্রবনের ছায়ার আঁধারে
কে ওই রমণী প'ড়ে এক ধারে
তাঁহার চরণোপ্রান্তে!
নিদারুণ রোগে মারীগুটিকায়
ভরে গেছে তার অঙ্গ--
রোগমসীঢালা কালী তনু তার
লয়ে প্রজাগণে পুরপরিখার
বাহিরে ফেলেছে, করি' পরিহার
বিষাক্ত তার সঙ্গ।
সন্ন্যাসী বসি আড়ষ্ট শির
তুলি নিল নিজ অঙ্কে--
ঢালি দিল জল শুষ্ক অধরে,
মন্ত্র পড়িয়া দিল শির-'পরে,
লেপি দিল দেহ আপনার করে
শীতচন্দনপঙ্কে।
ঝরিছে মুকুল, কূজিছে কোকিল,
যামিনী জোছনামত্তা।
"কে এসেছ তুমি ওগো দয়াময়'
শুধাইল নারী, সন্ন্যাসী কয়--
"আজি রজনীতে হয়েছে সময়,
এসেছি বাসবদত্তা!'.....
ভেবেছিনু গনি গনি লব সব তারা--
গনিতে গনিতে রাত হয়ে যায় সারা,
বাছিতে বাছিতে কিছু না পাইনু বেছে।
আজ বুঝিলাম, যদি না চাহিয়া চাই
তবেই তো একসাথে সব-কিছু পাই,
সিন্ধুরে তাকায়ে দেখো,মরিয়ো না সেঁচে........
সুন্দরী ছায়ার পানে তরু চেয়ে থাকে--
সে তার আপন, তবু পায় না তাহাকে......
মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে
একদা ছিলেন সুপ্ত--
নগরীর দীপ নিবেছে পবনে,
দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে,
নিশীথের তারা শ্রাবণগগনে
ঘন মেঘে অবলুপ্ত।
কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ
সহসা বাজিল বক্ষে!
সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল,
স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল,
রূঢ় দীপের আলোক লাগিল
ক্ষমাসুন্দর চক্ষে।
নগরীর নটী চলে অভিসারে
যৌবনমদে মত্তা।
অঙ্গ আঁচল সুনীল বরন,
রুনুঝুনু রবে বাজে আভরণ--
সন্ন্যাসী-গায়ে পড়িতে চরণ
থামিল বাসবদত্তা।
প্রদীপ ধরিয়া হেরিল তাঁহার
নবীন গৌরকান্তি--
সৌম্য সহাস তরুণ বয়ান,
করুণাকিরণে বিকচ নয়ান,
শুভ্র ললাটে ইন্দুসমান
ভাতিছে স্নিগ্ধ শান্তি।
কহিল রমণী ললিত কণ্ঠে,
নয়নে জড়িত লজ্জা,
ক্ষমা করো মোরে কুমার কিশোর,
দয়া করো যদি গৃহে চলো মোর,
এ ধরণীতল কঠিন কঠোর
এ নহে তোমার শয্যা।'
সন্ন্যাসী কহে করুণ বচনে,
"অয়ি লাবণ্যপুঞ্জ,
এখনো আমার সময় হয় নি,
যেথায় চলেছ যাও তুমি ধনী,
সময় যেদিন আসিবে আপনি
যাইব তোমার কুঞ্জ,'
সহসা ঝঞ্ঝা তড়িৎশিখায়
মেলিল বিপুল আস্য।
রমণী কাঁপিয়া উঠিল তরাসে,
প্রলয়শঙ্খ বাজিল বাতাসে,
আকাশে বজ্র ঘোর পরিহাসে
হাসিল অট্টহাস্য।
...
বর্ষ তখনো হয় নাই শেষ,
এসেছে চৈত্রসন্ধ্যা।
বাতাস হয়েছে উতলা আকুল,
পথতরুশাখে ধরেছে মুকুল,
রাজার কাননে ফুটেছে বকুল
পারুল রজনীগন্ধা।
অতি দূর হতে আসিছে পবনে
বাঁশির মদির মন্দ্র।
জনহীন পুরী, পুরবাসী সবে
গেছে মধুবনে ফুল-উৎসবে--
শূন্য নগরী নিরখি নীরবে
হাসিছে পূর্ণচন্দ্র।
নির্জন পথে জ্যোৎস্না-আলোতে
সন্ন্যাসী একা যাত্রী।
মাথার উপরে তরুবীথিকার
কোকিল কুহরি উঠে বারবার,
এতদিন পরে এসেছে কি তাঁর
আজি অভিসাররাত্রি?
নগর ছাড়ায়ে গেলেন দণ্ডী
বাহিরপ্রাচীরপ্রান্তে।
দাঁড়ালেন আসি পরিখার পারে--
আম্রবনের ছায়ার আঁধারে
কে ওই রমণী প'ড়ে এক ধারে
তাঁহার চরণোপ্রান্তে!
নিদারুণ রোগে মারীগুটিকায়
ভরে গেছে তার অঙ্গ--
রোগমসীঢালা কালী তনু তার
লয়ে প্রজাগণে পুরপরিখার
বাহিরে ফেলেছে, করি' পরিহার
বিষাক্ত তার সঙ্গ।
সন্ন্যাসী বসি আড়ষ্ট শির
তুলি নিল নিজ অঙ্কে--
ঢালি দিল জল শুষ্ক অধরে,
মন্ত্র পড়িয়া দিল শির-'পরে,
লেপি দিল দেহ আপনার করে
শীতচন্দনপঙ্কে।
ঝরিছে মুকুল, কূজিছে কোকিল,
যামিনী জোছনামত্তা।
"কে এসেছ তুমি ওগো দয়াময়'
শুধাইল নারী, সন্ন্যাসী কয়--
"আজি রজনীতে হয়েছে সময়,
এসেছি বাসবদত্তা!'.....
গনিতে গনিতে রাত হয়ে যায় সারা,
বাছিতে বাছিতে কিছু না পাইনু বেছে।
আজ বুঝিলাম, যদি না চাহিয়া চাই
তবেই তো একসাথে সব-কিছু পাই,
সিন্ধুরে তাকায়ে দেখো,মরিয়ো না সেঁচে........
আমি কার পথ চাহি এ জনম বাহি,
কার দরশন যাচি রে!
যেন আসিবে বলিয়া কে গেছে চলিয়া,
তাই আমি বসে আছি রে।
তাই মালাটি গাঁথিয়া পরেছি মাথায়
নীলবাসে তনু ঢাকিয়া,
তাই বিজন আলয়ে প্রদীপ জ্বালায়ে
একেলা রয়েছি জাগিয়া।
ওগো তাই কত নিশি চাঁদ ওঠে হাসি,
তাই কেঁদে যায় প্রভাতে।
ওগো তাই ফুলবনে মধু সমীরণে
ফুটে ফুল কত শোভাতে!
ওই বাঁশিস্বর তার আসে বার বার,
সেই শুধু কেন আসে না!
এই হৃদয়-আসন শূন্য যে থাকে,
কেঁদে মরে শুধু বাসনা।
মিছে পরশিয়া কায়, বায়ু বহে যায়,
বহে যমুনার লহরী,
কেন কুহু কুহু পিক কুহরিয়া ওঠে--
যামিনী যে ওঠে শিহরি।
ওগো যদি নিশিশেষে আসে হেসে হেসে
মোর হাসি আর রবে কি!
এই জাগরণে ক্ষীণ বদন মলিন
আমারে হেরিয়া কবে কী!
আমি সারা রজনীর গাঁথা ফুলমালা
প্রভাতে চরণে ঝরিব,
ওগো আছে সুশীতল যমুনার জল--
দেখে তারে আমি মরিব।
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
►হাতে-কলমে◄
কহিল ভিক্ষার ঝুলি, হে টাকার তোড়া,
তোমাতে আমাতে, ভাই, ভেদ অতি থোড়া--
আদান-প্রদান হোক। তোড়া কহে রাগে,
সে থোড়া প্রভেদটুকু ঘুচে যাক আগে।
►সাম্যনীতি ◄
"কালো তুমি'-- শুনি জাম কহে কানে কানে,
যে আমারে দেখে সেই কালো বলি জানে,
কিন্তু সেটুকু জেনে ফের কেন জাদু?
যে আমারে খায় সেই জানে আমি স্বাদু।
►জ্ঞানের দৃষ্টি ও প্রেমের সম্ভোগ◄
ভক্তি আসে রিক্তহস্ত প্রসন্নবদন--
অতিভক্তি বলে, দেখি কী পাইলে ধন।
ভক্তি কয়, মনে পাই, না পারি দেখাতে।--
অতিভক্তি কয়, আমি পাই হাতে হাতে।
►ভক্তি ও অতিভক্তি◄
টিকি মুণ্ডে চড়ি উঠি কহে ডগা নাড়ি,
হাত-পা প্রত্যেক কাজে ভুল করে ভারি।
হাত-পা কহিল হাসি, হে অভ্রান্ত চুল,
কাজ করি আমরা যে, তাই করি ভুল।
►কৃতীর প্রমাদ◄
হাউই কহিল, মোর কী সাহস, ভাই,
তারকার মুখে আমি দিয়ে আসি ছাই!
কবি কহে, তার গায়ে লাগে নাকো কিছু,
সে ছাই ফিরিয়া আসে তোরি পিছু পিছু।
►স্পর্ধা ◄
নাক বলে, কান কভু ঘ্রাণ নাহি করে,
রয়েছে কুণ্ডল দুটো পরিবার তরে।
কান বলে, কারো কথা নাহি শুনে নাক,
ঘুমোবার বেলা শুধু ছাড়ে হাঁকডাক।
►পরের কর্ম-বিচার◄
শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির,
লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির।
►ক্ষুদ্রের দম্ভ◄
দয়া বলে, কে গো তুমি মুখে নাই কথা?
অশ্রুভরা আঁখি বলে, আমি কৃতজ্ঞতা।
►পরিচয় ◄
জাল কহে, পঙ্ক আমি উঠাব না আর।
জেলে কহে, মাছ তবে পাওয়া হবে ভার।
►ভালো মন্দ ◄
লাঠি গালি দেয়, ছড়ি, তুই সরু কাঠি!
ছড়ি তারে গালি দেয়, তুমি মোটা লাঠি!
►গালির ভঙ্গি ◄
চন্দ্র কহে, বিশ্ব আলো দিয়েছি ছড়ায়ে,
কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মোর গায়ে।
►নিজের ও সাধারণের◄
............
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
►হাতে-কলমে◄
কহিল ভিক্ষার ঝুলি, হে টাকার তোড়া,
তোমাতে আমাতে, ভাই, ভেদ অতি থোড়া--
আদান-প্রদান হোক। তোড়া কহে রাগে,
সে থোড়া প্রভেদটুকু ঘুচে যাক আগে।
►সাম্যনীতি ◄
"কালো তুমি'-- শুনি জাম কহে কানে কানে,
যে আমারে দেখে সেই কালো বলি জানে,
কিন্তু সেটুকু জেনে ফের কেন জাদু?
যে আমারে খায় সেই জানে আমি স্বাদু।
►জ্ঞানের দৃষ্টি ও প্রেমের সম্ভোগ◄
ভক্তি আসে রিক্তহস্ত প্রসন্নবদন--
অতিভক্তি বলে, দেখি কী পাইলে ধন।
ভক্তি কয়, মনে পাই, না পারি দেখাতে।--
অতিভক্তি কয়, আমি পাই হাতে হাতে।
►ভক্তি ও অতিভক্তি◄
টিকি মুণ্ডে চড়ি উঠি কহে ডগা নাড়ি,
হাত-পা প্রত্যেক কাজে ভুল করে ভারি।
হাত-পা কহিল হাসি, হে অভ্রান্ত চুল,
কাজ করি আমরা যে, তাই করি ভুল।
►কৃতীর প্রমাদ◄
হাউই কহিল, মোর কী সাহস, ভাই,
তারকার মুখে আমি দিয়ে আসি ছাই!
কবি কহে, তার গায়ে লাগে নাকো কিছু,
সে ছাই ফিরিয়া আসে তোরি পিছু পিছু।
►স্পর্ধা ◄
নাক বলে, কান কভু ঘ্রাণ নাহি করে,
রয়েছে কুণ্ডল দুটো পরিবার তরে।
কান বলে, কারো কথা নাহি শুনে নাক,
ঘুমোবার বেলা শুধু ছাড়ে হাঁকডাক।
►পরের কর্ম-বিচার◄
শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির,
লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির।
►ক্ষুদ্রের দম্ভ◄
দয়া বলে, কে গো তুমি মুখে নাই কথা?
অশ্রুভরা আঁখি বলে, আমি কৃতজ্ঞতা।
►পরিচয় ◄
জাল কহে, পঙ্ক আমি উঠাব না আর।
জেলে কহে, মাছ তবে পাওয়া হবে ভার।
►ভালো মন্দ ◄
লাঠি গালি দেয়, ছড়ি, তুই সরু কাঠি!
ছড়ি তারে গালি দেয়, তুমি মোটা লাঠি!
►গালির ভঙ্গি ◄
চন্দ্র কহে, বিশ্ব আলো দিয়েছি ছড়ায়ে,
কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মোর গায়ে।
►নিজের ও সাধারণের◄
শক্তি যার নাই নিজে বড়ো হইবারে
বড়োকে করিতে ছোটো তাই সে কি পারে?
►অসাধ্য চেষ্টা।
কত বড়ো আমি, কহে নকল হীরাটি।--
তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি।
►সন্দেহের কারন।
পেঁচা রাষ্ট্র করি দেয় পেলে কোনো ছুতা,
জান না আমার সাথে সূর্যের শত্রুতা!
►শত্রুতা গৌরব।
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।
►মোহ।
তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয়
তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয়,
অপেক্ষা করিয়া আছি অস্তসিন্ধুতীরে
প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে।
►নতিস্বীকার।
কহিলেন বসুন্ধরা, দিনের আলোকে
আমি ছাড়া আর কিছু পড়িত না চোখে,
রাত্রে আমি লুপ্ত যবে শূন্যে দিল দেখা
অনন্ত এ জগতের জ্যোতির্ময়ী লেখা॥
►সত্যের আবিষ্কার।
শেফালি কহিল, আমি ঝরিলাম, তারা!
তারা কহে, আমারো তো হল কাজ সারা--
ভরিলাম রজনীর বিদায়ের ডালি
আকাশের তারা আর বনের শেফালি।
►এক পরিনাম।
আমি বিন্দুমাত্র আলো, মনে হয় তবু
আমি শুধু আছি আর কিছু নাই কভু।
পলক পড়িলে দেখি আড়ালে আমার
তুমি আছ হে অনাদি আদি অন্ধকার!
►ধ্রুবসত্য
দিবসে চক্ষুর দম্ভ দৃষ্টিশক্তি লয়ে,
রাত্রি যেই হল সেই অশ্রু যায় বয়ে!
আলোরে কহিল--আজ বুঝিয়াছি ঠেকি
তোমারি প্রসাদবলে তোমারেই দেখি।
►শক্তির শক্তি
শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন,
ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন।
ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা--
আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা।
►স্বাধীনতা
বজ্র কহে, দূরে আমি থাকি যতক্ষণ
আমার গর্জনে বলে মেঘের গর্জন,
বিদ্যুতের জ্যোতি বলি মোর জ্যোতি রটে,
মাথায় পড়িলে তবে বলে--বজ্র বটে!
►প্রত্যক্ষ প্রমাণ
.............
বড়োকে করিতে ছোটো তাই সে কি পারে?
►অসাধ্য চেষ্টা।
কত বড়ো আমি, কহে নকল হীরাটি।--
তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি।
►সন্দেহের কারন।
পেঁচা রাষ্ট্র করি দেয় পেলে কোনো ছুতা,
জান না আমার সাথে সূর্যের শত্রুতা!
►শত্রুতা গৌরব।
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।
►মোহ।
তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয়
তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয়,
অপেক্ষা করিয়া আছি অস্তসিন্ধুতীরে
প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে।
►নতিস্বীকার।
কহিলেন বসুন্ধরা, দিনের আলোকে
আমি ছাড়া আর কিছু পড়িত না চোখে,
রাত্রে আমি লুপ্ত যবে শূন্যে দিল দেখা
অনন্ত এ জগতের জ্যোতির্ময়ী লেখা॥
►সত্যের আবিষ্কার।
শেফালি কহিল, আমি ঝরিলাম, তারা!
তারা কহে, আমারো তো হল কাজ সারা--
ভরিলাম রজনীর বিদায়ের ডালি
আকাশের তারা আর বনের শেফালি।
►এক পরিনাম।
আমি বিন্দুমাত্র আলো, মনে হয় তবু
আমি শুধু আছি আর কিছু নাই কভু।
পলক পড়িলে দেখি আড়ালে আমার
তুমি আছ হে অনাদি আদি অন্ধকার!
►ধ্রুবসত্য
দিবসে চক্ষুর দম্ভ দৃষ্টিশক্তি লয়ে,
রাত্রি যেই হল সেই অশ্রু যায় বয়ে!
আলোরে কহিল--আজ বুঝিয়াছি ঠেকি
তোমারি প্রসাদবলে তোমারেই দেখি।
►শক্তির শক্তি
শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন,
ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন।
ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা--
আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা।
►স্বাধীনতা
বজ্র কহে, দূরে আমি থাকি যতক্ষণ
আমার গর্জনে বলে মেঘের গর্জন,
বিদ্যুতের জ্যোতি বলি মোর জ্যোতি রটে,
মাথায় পড়িলে তবে বলে--বজ্র বটে!
►প্রত্যক্ষ প্রমাণ

No comments:
Post a Comment
thank you...