Sunday, May 4, 2014

''কবিতার ডায়রী''

তুই কি আমার সুখ হবি...???

___________ ছোঁয়া

তুই কি আমার সুখ হবি…?

একলা পথের সঙ্গি হয়ে…,

হাতে হাতে হাত রেখে

সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়ে…!

সুখের একটু পরশ দিবি…?

তুই কি আমার কবিতা হবি…?

কষ্টের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে...

হৃদয়ের ক্যানভাসে স্বপ্ন এঁকে……!

নির্ঘুম চোখের স্বপ্ন হয়ে...

অন্ধকারে পথ দেখাবি…?

তুই কি আমার কষ্টের সঙ্গী হবি…?

কষ্ট গুলো জলাঞ্জলি দিয়ে……!

আলতো করে অধর চুমিয়ে...!

একটু খানি ঠোটের ছোঁয়া দিয়ে…?

ভালবেসে জড়িয়ে নিয়ে...?

বুকের মাঝে মাথা রেখে……!

তোর ভালবাসার উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিবি…?

তুই কি আমার ভালবাসা হবি…?

ভালবাসার উষ্ণ পরশ দিয়ে...

যতন করে ফুল বাগানে...!

নিষিদ্ধ সন্ধ্যায় ফুল ফুটাবি?......

 

ভালবাসি, ভালবাসি
-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,রাত
জেগে পড়ার টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত
কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস
থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত..
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত
আমি তোমার হাত ধরে যদি বলি- ভালবাস?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু
চাপ দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শশব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি- ভালবাস?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি
উপর তপ্ত রোদ,বাহন
পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময় হঠাত
দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার
দিকে তাকিয়ে কাঁধে হাত
দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো শেভ করছ তুমি,গাল
কেটে রক্ত পড়ছে,এমন
সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত
হাতে নিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত
আমার গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল
গলায় বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো খুব অসুস্থ
তুমি,জ্বরে কপাল পুড়ে যায়,
মুখে নেই রুচি, নেই কথা বলার
অনুভুতি,
এমন সময় মাথায়
পানি দিতে দিতে তোমার
মুখের দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম
শ্বাস আমার
শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে ভালবাসি
ভালবাসি..

ধরো যুদ্ধের
দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,প্রচন্ড
যুদ্ধে তুমিও অঃশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময়
পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাস?
ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যা
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস
দেবে,বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে
বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাস?
কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত
বুলাতে বুলাতে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি

ধরো প্রচন্ড
ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই
পৃথিবীতে,বাস
করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবা
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত
রেখে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..

ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার
করে বলি-ভালবাস?
চুপ করে থাকবে?নাকি সেখান
থেকেই
আমাকে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..

যেখানেই যাও,যেভাবেই
থাক,না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি..

দূর থেকে শুনব তোমার
কন্ঠস্বর,বুঝব
তুমি আছ,তুমি আছ
ভালবাসি, ভালবাসি.....

 

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস-
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস ।
যদি আর-কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও-
আমি যত দুখ পাই গো ।।

___ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.....

 

 

টোপ
-তসলিমা নাসরিন

যেরকম ছিলে, সেরকমই তুমি আছ
কেবল আমাকে মাঝপথে ডুবিয়েছ
স্বপ্নের জলে উলটো ভাসান এত
আমি ছাড়া আর ভাগ্যে জুটেছে কার!

আগাগোড়া তুমি অবিকল সেই তুমি
বড়শিতে শুধু গেঁথেছ দু’চার খেলা
অলস বিকেল খেলে খেলে পার হলে
রাত্তিরে ভাল নিদ্রাযাপন হয়।

তুমি তো কেবলই নিদ্রার সুখ চেনো
একশো একর জমি নিজস্ব রেখে
এক কাঠা খোঁজো বর্গার তাড়নায়
বর্গার চাষ পৃথক স্বাদের কিনা!

স্বাদ ভিন্নতা পুরুষ মাত্র চায়
তুমি তো পুরুষই, অধিক কিছু নও।

পুরুষেরা ভাল চোখ খেতে জানে চোখ
আমার আবার কাজলের শখ নেই।

বড়শিতে গাঁথা হৃদপিন্ডের আঁশ
ছিঁড়ে খেতে চাও, তুমি তো পুরুষই
খাবে।

সাঁতার জানি না, মধ্যনদীতে ডুবি
অন্ধকে টোপ দেবার মানুষ নেই.......

 

যে নিজেকে যত বেশি আড়াল করে রাখতে পারে তার তত বেশি বুদ্ধি ।

--হুমায়ূন আহমেদ...

 

এমন কোন দিন ছিল কি,যেদিন
আমি তোমাকে
"গুড মর্নিং" বলিনি??
এমন কোন দিন ছিল কি, যেদিন
আমি তোমাকে "লাঞ্চ করছো কিনা"
জিজ্ঞেস করিনি?? এমন কোন দিন ছিল কি,,যেদিন
আমি তোমায় জিজ্ঞেস করিনি "আজ তোমার
মন ভাল আছে?"
এমন কোন দিন ছিল কি, যেদিন
আমি তোমায়
"গুড নাইট" বলিনি?? এত কিছুর পর ও
ভালবাসা প্রকাশ
করতে আর কোন ভাষা কি প্রয়োজন ছিল? ছোট
ছোট অনুভূতির কি মূল্য দিবে তুমি??

লিখা____
এস এইচ রুবেল

 

"সন্ধি"
—নওরীন অশ্রু।

হাড় কাঁপানো এক শীতের সকাল—
বিরক্ত তুই চোখ কচলিয়ে সামনে দাঁড়াবি......
হেসেই বলবো-বেশ করেছি ঘুম ভাঙগিয়েছি!!
কুয়াশায় ভেজা এক কাপেতেই দুজন চা খাবো;
তাই তো ডেকেছি!!..........."
সেই রহস্যে ভরা চাহনিতে আমার আপাদমস্তক
দেখবি.....
মুখ টেপা হাসি চেপেই বলবি-
কি উদ্ভট সাজে সেজেছিস রে সকাল -সকাল
পাগলি!!"
অভিমানে নাকি রাগে চোখ জ্বলছে আমার;মনে হয়
কান্না পাচ্ছে খুব........!
তোর দেয়া নীল শাড়ি,চুড়ি সবি তো ভালোবেসেই
সেজেছি!
তোর ভালোলাগা জুড়েই আমার সমস্ত ভালবাসা
আর তুই ই কিনা............!!
হঠাত বললি-চাদর এনেছিস পাগলি!"
কৌশলে চোখের জল টি মুছেই......
-কেন রে কবি???
বললি,এক চাদর জড়িয়েই হাঁটবো দুজন.....
ঐ মোড়ের শেষ রাস্তাটুক পর্যন্ত.......
এরপর না হয়
টং এর চা!?
যাবি??"
অভিমানের শেষ বিন্দুটি ঝরিয়েই বললাম-
নাহ্ চাদর নেই—চা ও আজ থাকুক!...."
এইবার তোর সজোরে হাসি!!
অপমান বোধে এইবার চলে যাওয়ার পথেই
পা বাড়াবো ভাবছি.....
এমন সময় তুই—
"শীত লাগছে রে খুব পাগলি.........
তুই আর আমি ই এক চাদর হয় চল্!
এক চাদরেই থাকুক ভালবাসা বন্দি;
আর এক কাপেতেই হোক আজ
চা এর সন্ধি................!!

 

"নষ্ট অনুভূতি"
—নওরীন অশ্রু।

দেখ্ কবি!
রাতবৃষ্টি অঝোরে কেঁদে
আমার শরীর ছুঁয়েছে,
রাতবৃষ্টির জল আমার চোখের কোল
ছুঁয়েছে আজ!.....

রাতবৃষ্টিতে ভিজে সুখের এক মিষ্টি
অনুভূতি খুঁজে মানুষ......
তুই রাতবৃষ্টির ছন্দে মুগ্ধ হয়ে—
সহস্র নারীর হৃদয় ছোঁয়া
এক একটি কবিতার জন্ম দিস!

আর এই পাগলি!?
রাতবৃষ্টিতে এক জোড়া চোখ আড়াল
করেছে মাত্র.......
এ আর কঠিন কি!

নষ্ট অনুভূতির কষ্টে ভেজা.....
নির্ঘুম-—কালি মাখা—অস্পষ্ট—
এক জোড়া মায়াহীন চোখ.......

দেখেছিস কখনো কবি?
জানি তোর মায়াহীন কালির
ছাপে চাপা পড়া দৃষ্টিতে মন জুড়োই না......

শুধু করুণায় হয় অকারণ এক মায়ায়!
—কবিতার ছন্দপতন হয় এই
শূন্যতা জড়ানো দৃষ্টিতে-
দৃষ্টি মেলাতে গেলে........

তাই তো নষ্ট অনুভূতির আড়ালে বাঁচি আজ!

তুই রাতবৃষ্টিই দেখ্ কবি.......
রাতবৃষ্টিই দেখ্!.........

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

 

'আমার জলেই টলমল করে আঁখি'
–––নির্মলেন্দু গুণ

নিজের জলেই টলমল করে আঁখি,
তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি।
চেষ্টা করেও রাখতে পারি না ধরে-
ভয় হয় আহা, এই বুঝি যায় পড়ে।

এমনিই আছি নদীমাতৃক দেশে,
অশ্রুনদীর সংখ্যা বাড়াবো শেষে?
আমার গঙ্গা আমার চোখেই থাক্
আসুক গ্রীষ্ম মাটি-ফাটা বৈশাখ।

দোষ নেই যদি তখন যায় সে ঝরে,
ততদিন তাকে রাখতেই হবে ধরে।
সেই লক্ষেই প্রস্তুতি করে সারা,
লুকিয়েছিলাম গোপন অশ্রুধারা।

কিন্তু কবির বিধি যদি হন বাম,
কিছুতে পূর্ণ হয় না মনস্কাম।
মানুষ তো নয় চির-সংযমে সাধা,
তাই তো চোখের অশ্রু মানে না বাঁধা।

আমার জলেই টলমল করে আঁখি,
তোমার চোখের অশ্রু কোথায় রাখি........

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

 

'অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে'
___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না।
এবার হৃদয় মাঝে লুকিয়ে বোসো,
কেউ জানবে না, কেউ বলবে না।

বিশ্বে তোমার লুকোচুরি,
দেশ বিদেশে কতই ঘুরি -
এবার বলো আমার মনের কোণে
দেবে ধরা, ছলবে না।

আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না।

জানি আমার কঠিন হৃদয়
চরণ রাখার যোগ্য সে নয় -
সখা, তোমার হাওয়া লাগলে হিয়ায়
তবু কি প্রাণ গলবে না।

না হয় আমার নাই সাধনা,
ঝরলে তোমার কৃপার কণা
তখন নিমেষে কি ফুটবে না ফুল
চকিতে ফল ফলবে না।

আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না।

(কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি)

 

তুমি আমার সেই জন
যাকে নিয়ে সপ্নদেখি সারাক্কন।
তুমি আমার সেই আসা
যাকে দেবো এই হৃদয়ে ভালবাসা .
তুমি আমারসেই জন
যাকে দেখলে পাগলামী করে
আমার এইমন.....

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

শুকনো পাতার মতো
শুকিয়ে গেছে মন!_____
জানিনা কোন অপরাধে
হয়ে গেলে এমন!______
কি চেয়েছি কি পেয়েছি?
তা তো জানি না!______
শুধু জানি মনটা আমার
একদম ভালো না৷______

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

তুমি যখন প্রশ্ন করো
--- মহাদেব সাহা

তুমি যখন প্রশ্ন করো
আমি কি তোমায় ভালোবাসি?
অন্ধকারে লুকিয়ে মুখ
আমি নিজের মনেই হাসি ।

উত্তরে কি বলবো বলো
বিশ্বকোষেও হয়তো নাই,
উথালপাথাল খুঁজে মরি
কোথায় যোগ্য শব্দ পাই ।

জানো কি এই প্রশ্নে তোমার
হঠাত্ থামে নদীর ধারা
আকাশখানি কালো করে
মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারা ।

তার চেয়েও গভীর ঘন
লজ্জা ঢাকে আমার মুখ
পাইনে খুঁজে একটি কথাও
শঙ্কা ভয়ে কাঁপে বুক ।

এতোদিনেও বোঝেনি যে
আজ বোঝাবো কোন ভরসায়?
না বলা সেই ছোট্টো কথা
বলিনি কি কোনো ভাষায়?

বলিনি কি এই কথাটি
তোমার দিকে নীরব চেয়ে,
এই গান কি সারাজীবন
জীবন দিয়ে যাইনি গেয়ে?

সেই কথা তো জানে ভালো
শিশির ভেজা ভোরের ফুল
তুমি যখন প্রশ্ন করো
আমি করি অধিক ভুল......

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

 কবর-
জসীমউদ্দীন

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-
গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের
জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন
মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল
বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে
হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর
ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার
নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ
ধরি।
যাইবার
কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে
লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব
মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের
সাথে মিশে
ছোট-খাট তার
হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু
দিশে।
বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত
ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-
তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ
বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত
না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন
লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির
বাটে!
হেস না হেস না শোন দাদু, সেই তামাক
মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস
যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন
পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায়
কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন
করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম
নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয়
খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত
নসিব হয়।
তারপর এই শূন্য জীবনে যত
কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই
চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল
করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন
মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ
নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি,
মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয়
সুখ।
এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়,
এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ
যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল
আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর
আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম
বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ
শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের
কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম
যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর
কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর
দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত
ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!
তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল
দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই
কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।
গাছের পাতার সেই বেদনায়
বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-
মাঠখানি ভরে।
পথ
দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া
যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের
পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ
পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের
জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত
তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল
গাঁ।
ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল
বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল
খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায়
ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের
তাজ।
মরিবার
কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল,
বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর
মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার
ওরে,
কত ব্যথা মোর
আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে
তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­
জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­
ব্যথার ছলে।
ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল আমার
কবর গায়
স্বামীর মাথার
মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল
পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের
ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে
ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে
এইখানে তরুছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায়
লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকিমেয়েরা সারারাত
জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন
বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান
খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও
মায়!
এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের
বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত
না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত
যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের
বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার,
চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার
তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন
হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু
উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের
কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও
পরাণে বাজিবে মরণবীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর
উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও
দাদু! ধীরে।
ব্যথাতুরা সেই
হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার
জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু
করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন
তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয়
খোদা! দয়াময়।
আমার বুজীর তরেতে যেন গো বেস্ত
নসিব হয়।
হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের
মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের
দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই
মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত
সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত
ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম
যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর
হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে
হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের
চোখের ধারা।
একদিন গেনু গজনার
হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার
প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন
আছে।
কী জানি সাপের দংশন
পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার
প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধরধর বুক ফেটে যায়, আর
বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয়
দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­
ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন
মাটির তলে,
ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের
রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ
আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত
ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা!
রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যুব্যথিত প্রাণ......

 

“মন ভালো নেই"
__মহাদেব সাহা

বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে?
এই শূন্য ঘরে, এই নির্বসনে
কতোকাল, আর কতোকাল!
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস্ত
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূন্যতার এই দীর্ঘশ্বাস, এই দীর্ঘ পদধ্বনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙা চেয়ারে একা বসে আছি।
এ কী শান্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশ্বর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা!
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়,
আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই-
এই কি আমার অপরাধ!
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিল-
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানো কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর
ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূন্যতা, শূন্যতা।
তোমার শূন্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না-
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব, সারাদিন
তুষারপাত-
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই....

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

'কাজী নজরুল ইসলাম ''

ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।

তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লার-পুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’

কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!

খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা! 

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

শব্দহীন কথপোকথন ।।
_______ ছোঁয়া
ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে এখন শুধুই যন্ত্রণার বসবাস,
স্বপ্ন গুলো দিলাম ছুটি,তুই কুড়িয়ে নিয়ে যাস।
যতন করে রাখিস তোর ছোট্ট হৃদয় কুঠিরে,
অবহেলায় অনাদরে ছুড়ে ফেলিস,
নয়ত দিস উড়িয়ে।।
মুক্ত করে দিলাম তোরে,মিটিয়ে দিলাম
দেনা পাওনার ভার,
নীল নীলিমার রাত্রিতে, স্বপ্ন ভাঙ্গা ঘুমের
ঘোরে খুঁজিসনা আমায় আর ।।
বেদনার নীল রঙ্গে রক্ত করবী আজ___
ছোপ ছোপ আল্পনায় সেজেছে এক সাজে,
শব্দহীন কথপোকথন নিরবে পোড়াচ্ছে
এক করুণ উপহাস-উল্লাসে।
স্বপ্নেরা নত জানু হয়ে বারবার ফিরে আসে
হৃদয়ে ঢেউ তুলে,
জ্যোৎস্না রাতে একলা শুনছি হৃদয় ভাঙ্গনের
ধ্বনি,প্রকৃতির নিয়ম ভুলে.....

 

তুমি চাইলে মেঘ হবো ,,
এনে দেবো বৃষ্টি ।।

তুমি চাইলে পথ হবো ,,
কেড়ে নেবো দৃষ্টি ।।

তুমি চাইলে রাত হবো ,,
এনে দেবো আধাঁর ।।

তুমি চাইলে আকাশ হবো ,,
হবো বিশাল পাহাড় ।।

তুমি চাইলে জ্যোত্স্না হবো,,
এনে দেবো আলো ।।

তুমি না চাইলেও জনম জনম ,,
বাসবো তোমায় ভালো..... 

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

...কাজী নজরুল ইসলাম

অনেক কথা বলার মাঝে
লুকিয়ে আছে একটি কথা।

বলতে নারি সেই কথাটি
তাই এ মুখর ব্যাকুলতা।।

সেই কথাটি ঢাকার ছলে
অনেক কথা যাই গো ব’লে
ভাসি আমি নয়ন-জলে
বল্‌তে গিয়ে সেই বারতা।।

অবকাশ দেবে কবে
কবে সাহস পাব প্রাণে
লজ্জা ভুলে সেই কথাটি
বল্‌ব তোমায় কানে কানে।

মনের বনে অনুরাগে
কত কথার মুকুল জাগে
সেই মুকুলে বুকে জাগাও
ফুটে উঠার ব্যাকুলতা।।

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

তুমি আসবে বলে ||

_______ ছোঁয়া

তুমি নেই বলে আজ আর কবিতার উপমা খুঁজে পাইনা,
তুমি নেই বলে হৃদয়ের তানপুরাটা
আগের মতো আর বাজেনা।
তুমি নেই বলে ডায়েরির পাতায় আঁকি বুঁকি করিনা,
তুমি নেই বলে দীঘির জলে নিজের ছায়া খুঁজিনা,
তুমি ছিলে বলে কপালে টিপ,পায়ে আলতা,হাতে চুড়ি,লাল বেনারসি অঙ্গে জড়াতাম,
তুমি দেখবে বলে রুপোর কাটা খোঁপায় গুঁজে তাতে বেলির মালা পরাতাম।
তুমি ছিলে বলে দু'পায়ে নূপুর পরে ছন্দে ছন্দে পুকুর ঘাঁটে যেতাম,
তুমি ছিলে বলে সাঁজ বেলাতে পান খেয়ে মুখটি পোড়াতাম।
তুমি নেই বলে রাখালিয়ার বাঁশীর সুরে মন উচাটন করেনা,
তুমি নেই বলে আকাশের তারা গুলো পিদিমের মতো আর জ্বলেনা।
তুমি আসবে বলে দখিনা দুয়ার খুলে দিয়েছিলাম,
তুমি আসবে বলে সাজের বাতি বেলোয়ারির মতো জ্বালিয়েছিলাম।
বৃথাই গেল সকল আয়োজন,
ফুরিয়ে গেছে তোমার কাছে,
আমার প্রয়োজন।।

 


আমি ইট,তুমি খোয়া;
আমি খই,তুমি মোয়া।

আমি ফুল,তুমি কাঁটা;
আমি গম,তুমি আটা।

আমি নৌকা,তুমি ব্রীজ;
আমি মাছ,তুমি ফ্রিজ।

আমি রাত,তুমি ভোর;
আমি ভালো,তুমি চোর।

আমি বৃক্ষ,তুমি ফল;
আমি নদী,তুমি জল।

আমি মেঘ,তুমি বৃষ্টি;
আমি চক্ষু,তুমি দৃষ্টি।

আমি গুল্ম,তুমি তরু;
আমি চতুর,তুমি ভীরু।

আমি বধির,তুমি বোবা;
আমি সাগর,তুমি ডোবা

আমি খাতা,তুমি কলম;
আমি ট্যাবলেট,তুমি মলম।

আমি কান্না,তুমি হাসি;
আমি টাটকা,তুমি বাসি।

আমি বিষন্ন,তুমি হতাশা;
আমি কদমা,তুমি বাতাসা।

আমি হাত,তুমি পাও;
আমি নগদ,তুমি ফাও।

আমি বৃষ্টি,তুমি rain.....
আমি রিক্সা,তুমি চেইন......

 

লিখা____এস এইচ রুবেল

 

 

    



No comments:

Post a Comment

thank you...